চোখ বন্ধ করে সেই বিজ্ঞাপনটির কথা ভাবুন! যেখানে ঐশ্বর্যা রাই (তখনও বচ্চন নন) ধীরেসুস্থে তারিয়ে তারিয়ে চকোলেট উপভোগ করছেন। পাশের পুরুষটি লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে, জিভ ও ঠোঁট চাটছেন একটুকরো স্বাদের আশায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, মাত্র একটি টুকরো দিয়েই রাইসুন্দরী শরীরী ভাষায় স্পষ্ট করে দিলেন—‘এ স্বাদের ভাগ হবে না!’ সময়টা নব্বইয়ের শেষ বা শূন্য দশকের গোড়ার দিক।
‘চকোলেট ডে’-তে চকোলেটের স্বাদে মাতবেন তারকারা?
চোখ বন্ধ করে একবার সেই বিজ্ঞাপনটির কথা ভাবুন! যেখানে ঐশ্বর্যা রাই (তখনও বচ্চন নন) ধীরে ধীরে, উপভোগের সঙ্গে চকোলেট খাচ্ছেন। আর পাশের পুরুষটি লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে, ঠোঁট ও জিভ চাটছেন একটুকরো স্বাদের আশায়। শেষ পর্যন্ত, মাত্র একটি টুকরো দিয়েই রাইসুন্দরী শরীরী ভাষায় বুঝিয়ে দিলেন—‘এ স্বাদের ভাগ হবে না!’ সময়টা নব্বইয়ের শেষ বা শূন্য দশকের গোড়ার দিক।
বদলেছে সময়, বদলেছে প্রেমের ধরন
একুশ শতকে প্রেম আর একদিনের বিষয় নয়—এখন প্রেম উদযাপনের জন্য সাত দিন বরাদ্দ! ৭ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ‘ভ্যালেন্টাইনস উইক’ যেন এক রঙিন উৎসব। দোকানভর্তি গ্রিটিংস কার্ড, টেডি, গোলাপ আর দেশি-বিদেশি চকোলেটের বাহারি সম্ভার জানান দেয় ভালোবাসার প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে।
গোলাপ দিয়ে শুরু হয় প্রেমের এই সপ্তাহ, তারপর আসে প্রেমপ্রস্তাবের দিন। প্রেম যদি গৃহীত হয়, তবে মিষ্টিমুখের পালা। আর সেই মিষ্টিমুখের জন্য ‘চকোলেট ডে’ তো আছেই! কিন্তু আজকের দিনে কি সত্যিই চকোলেট নিয়ে আগের মতো উন্মাদনা আছে?
শরীর সচেতনতার যুগে চকোলেট ডে
বিজ্ঞাপনের ঐশ্বর্যার মতো এখন আর কেউ চেটেপুটে চকোলেট খান কি? শরীর সচেতন এই প্রজন্ম চিন্তায় থাকেন অতিরিক্ত ক্যালোরি নিয়ে। কোমরের মাপ যদি বেড়ে যায়? সাধারণ মানুষ থেকে তারকারা—প্রায় সবাই এখন ফিটনেস সচেতন। তাহলে কি ‘চকোলেট ডে’ তার জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে?
তবুও থাকবে চকোলেটের জায়গা
শরীর সচেতনতা থাকলেও ভালোবাসার দিনে চকোলেটের আবেদন তো অমলিন! দোকানে থরে বিথরে সাজানো নানা স্বাদের চকোলেটের দিকে হাত বাড়াবেন না, তা কি হয়? প্রিয়জন যদি উপহার দেন, তাহলে অন্তত একটুখানি স্বাদ নিতেই হবে! চকোলেট ডে-তে তাই হয়তো কম পরিমাণে, কিন্তু ভালোবাসার স্বাদ মিশিয়ে চকোলেট খাওয়া হবেই!আর যাঁরা শরীর বা বয়সের অজুহাতে চকোলেট খাওয়ার থেকে দূরে থাকতে চান, তাঁরা হয়তো অতীতের মিষ্টি স্মৃতিতে ডুবে থাকবেন। যেমন, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, ইশা সাহা, ঋষি কৌশিক, স্বস্তিকা দত্ত, ঊষসী রায়।
চকোলেট ঠিক আমার সঙ্গে মানায় না...
‘আজ কি "চকোলেট ডে"?’ আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। তিনি তখন বিমানবন্দরে, সেখান থেকেই জানালেন, তাঁর সময়কালেও এসব ব্যাপার ছিল না। গোলাপ দিবস বা চকোলেটে মিষ্টিমুখের দিন কখন, কীভাবে এসেছে—তা জানতেনই না। অভিনেতার 'মাচো' ইমেজ যেমন তাঁর কাজে, তেমনি তাঁর কথাতেও। তিনি বললেন, “আমার সঙ্গে চকোলেটের সম্পর্কটা ঠিক যায় না। আমারও বড্ড ন্যাকা লাগে। ফলে, বিশেষ কোনো দিনে কাউকে চকোলেট দেব, এমন ভাবনা তো আসেই না।” তাহলে ইন্দ্রনীল কি চকোলেটের থেকে দূরে থাকেন? “তা কেন! খাই তো, তবে বয়সের কথা ভেবে কখনও কখনও ডার্ক চকোলেট মুখে পুরি।” এরপর ফাঁস করলেন, বিশেষ দিনে চকোলেট উপহার দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর, এবং মেয়ের ছোটবেলায় ছোট্ট মুঠি ভরিয়ে নানা ধরনের চকোলেটও দিতেন।
ডার্ক চকোলেট পছন্দ হলে আমায় পছন্দ হবে...!
সতর্ক করলেন নাকি ইশা সাহা? একেবারেই না! অভিনেত্রী আদতে এমনই, একটুও চকোলেট ভালোবাসেন না। তাই বিশেষ দিনের প্রসঙ্গ উঠতেই তাঁর সাফ কথা, “আমার একটুও পছন্দ নয়। যিনি দেবেন, তিনি আসলে নিজেরই লোকসান করবেন! যদি আমার জীবনে কেউ থাকে, তিনি কিন্তু ভুলেও চকোলেট দেবেন না!” শরীরচর্চা করতে করতে এক নিঃশ্বাসে এ কথাগুলো বলে গেলেন ইশা। তাহলে কি তাঁর জন্য এই বিশেষ দিনটি ডার্ক চকোলেটের মতো তেতো? “উমমম্! কিছুটা বলতেই পারেন। যাঁরা ডার্ক চকোলেট পছন্দ করেন, তাঁদের আমায় পছন্দ হবে”, বলেই হাসির রোল ওঠে অভিনেত্রীর মুখে।
কিন্তু যদি তাঁর পছন্দের কেউ চকোলেট ভালোবাসেন? তাহলে কি তিনি চকোলেট উপহার দেবেন? ইশা বলেন, “তাদের জন্য নিশ্চয়ই দেব! কিন্তু যদি আমার জীবনে কেউ না থাকেন, তবে চকোলেটের কোনো গুরুত্ব নেই।”
তাহলে, প্রেম দিবসে মিষ্টিমুখ হবে কী দিয়ে? অভিনেত্রীর দুষ্টু উত্তর, “আগে জানতে হবে, আমি চাই কি না।” তবে যদি অভিনেত্রী সবুজ সংকেত দেন, তাহলে ‘ডার্ক চকোলেট’ কিছুটা হলেও চলতে পারে!
আমার তো ইমেজটাই রাগী রাগী
“এমন ইমেজে চকোলেট মানায়?”—ঋষি কৌশিকের কাছে এ প্রশ্নের পাল্টা কৌতূহল। না তিনি খেতে ভালোবাসেন, না ‘চকোলেট হিরো’ ইমেজে খুশি। স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন, ছোটবেলা থেকেই আইসক্রিম আর চকোলেট তাঁকে টানেনি। তাঁর কাছে আইসক্রিম মানে ‘গোলা’, আর কেক যে কোনো অন্য স্বাদের হতে পারে।
তবে কি শরীর সচেতনতার কারণে? প্রেমে পড়লে কি মানুষ চকোলেট খায় বা উপহার দেয়? অভিনেতার রসিক উত্তর, “এ ধরনের কিছু হলে বা থাকলে তো সবাইকে জানাব কেন?” এরপর বললেন, “একেবারে খাইনি, এমন নয়। তবে খুব একটা নয়। বরং কেউ দিলে, আশপাশে যারা থাকেন, তাদের ভাগ করে দিয়ে দিই।”
মন আর মুখ মিষ্টি থাকলেই সব মিষ্টি...
এমনটাই মনে করেন স্বস্তিকা দত্ত। তিনি বললেন, “সারা বছর যদি ‘চকোলেট ডে’ হতো, মন থেকে চাইছি। সারা বছর তা হলে সকলের মুখ ও মন মিষ্টি থাকবে, আর উপহারেও চকোলেট আবশ্যিক হবে।” স্বস্তিকা যে নিছক কথার কথা বলছেন, তাও নয়। তিনি এতটাই 'চকোলেটি' যে, রোজ নিজে আরাধ্য দেবতা জগন্নাথদেবকে চকোলেট খেতে দেন!
প্রিয়জনদেরও নানা ছুতোয় চকোলেট উপহার দিতে ভালোবাসেন তিনি। তবে তার পরেই ফাঁস করলেন, “যদিও দেওয়ার থেকে আমি চকোলেট উপহার পাই বেশি।” বলেই ফোনের ওপার থেকে শুনে গেল হাহাহা হাসি!
ভিকিকে পেলে নিজেই ‘চকোলেট’ হয়ে যাব
ভিকি কৌশল তাঁর নয়নমণি! তাঁকে পেলে নিজেই ‘চকোলেট’ হয়ে যেতে প্রস্তুত ঊষসী রায়! ‘চকোলেট ডে’-র প্রসঙ্গ তুলতেই অভিনেত্রী লাজুক কণ্ঠে এ কথা জানালেন। তবে সঙ্গে আফসোসও ছিল, “কলকাতায় ভিকি ঘুরে গেলেন, কিন্তু দেখাই করতে পারলাম না। বিশ্বাস করুন, ওকে এত ভালোবাসি! যদি ডেট করতে পারতাম...!”
ধরুন, বিশেষ দিনে আপনি আর ভিকি একসঙ্গে, কোন স্বাদের চকোলেট উপহার দেবেন? এবার সাহসী হয়ে অভিনেত্রী বললেন, “ভিকির কাছে পৌঁছতে পারলে নিজেকেই ওঁর হাতে সঁপে দেব। তারপর যদি চকোলেট খেতে চায়, দেব।” এবং একথাও জানাতে ভুললেন না, তিনি চকোলেটের ‘পোকা’। সারা বছর নিজে চকোলেট কেনেন, কিংবা উপহার পান। তাই তাঁর কাছে আলাদা করে ‘চকোলেট ডে’-র কোনো প্রয়োজন হয় না।